Sunday, April 9, 2017

বাংলা ২য় পত্র

বাংলা উচ্চারণের নিয়ম ও উচ্চারণ ভান্ডার

১। আদ্য 'অ' এর পর 'ই' কার বা 'ঈ' কার থাকলে উক্ত 'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
২। আদ্য 'অ' এর পরে 'য' ফলা যুক্ত বর্ণ থাকলে 'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
৩। আদ্য 'অ' এর পর 'ক্ষ' থাকলে 'অ' এর উচ্চারণ সাধারণত 'ও' এর মত হয়।
৪। 'ও' কারান্ত শব্দের আদিতে 'অ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।
৫। আদ্য 'অ' যদি না বোধক হয় তবে  'অ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।

১। তিন বর্ণ বিশিষ্ট শব্দের মাঝের 'অ' এর আগে যদি  অ, আ, এ এবং অ থাকে, তবে 'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
২। মধ্য 'অ' এর আগে ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ কার থাকলে 'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
৩। শব্দের মধ্যে 'ক্ষ' যুক্ত  'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
৪। কিছু কিছু শব্দে পৃথকভাবে হসন্ত উচ্চারিত হলেও সমাসবদ্ধ হওয়ার ফলে মাজখানে 'ও' উচ্চারিত হয়।
৫। তিন অক্ষর বিশিষ্ট শব্দের শেষে যুক্ত বর্ণসহ 'আ' কার থাকলে মাঝখানের  'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।


১। বংলা ভাষায় ব্যবহৃত বেশ কিছু দ্বিরুক্ত শব্দের অন্ত  'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
২। ১১ থেকে ১৮ পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দের শেষে  'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
৩। 'ত' এবং 'ইত' প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দের শেষে  'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
৪। বিশেষ্য শব্দের শেষে 'হ' থাকলে  'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।
৫। 'তর' ও 'তম' প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দের শেষে  'অ' এর উচ্চারণ 'ও' এর মত হয়।  

১। শব্দের  আদিতে না বোধক শব্দে 'অ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।
২। 'আ' কারান্ত শব্দের আদিতে 'অ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।
৩। শব্দের আদিতে 'স' সহিত অর্থে ব্যবহৃত হলে 'অ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।
৪। 'ও' কারান্ত একাক্ষর শব্দের আদিতে 'অ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।
৫। 'অ' এর পরে 'ঙ' কিংবা ' ং ' থাকলে  'অ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।
১। 'য' ফলা যুক্ত শব্দের আদিতে 'অ' এর উচ্চারণ সংবৃত অর্থাৎ 'ও' এর মত হয়।
২। ই/ঈ, উ/ঊ কারের আদিতে 'অ' এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।
৩। 'ক্ষ' যুক্ত শব্দের আদিতে 'অ' এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।
৪। তিন বর্ণ বিশিষ্ট শব্দের মাঝের 'অ' সংবৃত হয়।
৫। 'র' ফলা যুক্ত বর্ণে 'ও' উচ্চারিত হয়।

১। শব্দের শুরুতে 'এ' কার এবং তারপরে ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ও কার থাকলে 'এ' এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়।
২। শব্দের শুরুতে 'এ' কারের পর যদি ং/ঙ থাকে এবং তারপরে  ই, ঈ, উ, ঊ ছাড়া অন্য ধ্বনি থাকলে 'এ' এর উচ্চারণ 'অ্যা' এর মত হয়।
৩। 'এ' কার যুক্ত একাক্ষর ধাতুর সঙ্গে 'আ' যুক্ত হলে সাধারণত সেই 'এ' এর উচ্চারণ 'অ্যা' এর মত হয়।
৪। মূলে 'ই' কার যুক্ত একাক্ষর ধাতুর সঙ্গে 'আ লার যুক্ত হলে তার উচ্চারণ স্বাভাবিক থাকবে।
৫। একাক্ষর সর্বনাম পদের 'এ' কার সাধারণত অবিকৃত অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হয়।

বদলে ফেলো দৃষ্টিভঙ্গি:


এটা কমবেশি সকল শিক্ষার্থীরই সম্মুখীন হতে হয় যে একনাগাড়ে পড়তে পড়তে মাথায় আর পড়া ধরে না। এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আমরা সকলেই মোটামুটি চোখ বন্ধ করে একটি সাধারণ উপায় অবলম্বন করি- হাতের কাছের ফোনটি নিয়ে ফেসবুক অথবা ইন্সটাগ্রাম অথবা অযাচিত যত ধরণের অ্যাপ এর ভেতর রয়েছে, প্রত্যেকটাতে একবার ঢুঁ মেরে আসি। তা কেউ ১০ মিনিটের জন্য, আবার কেউ ৩০ মিনিট।
এই কাজটা যে আমরা সবসময় নেহায়েত চেক করার ইচ্ছে থেকে করি, তা কিন্তু না। অনেকেই হয়ত ‘Brain Freeze’ কাটাতে অথবা একটা স্বল্প বিরতি নেবার জন্য করে থাকো। এই পাঠ্যবিরতিটিই কিন্তু তুমি একটি ভিন্ন আঙ্গিকে নেওয়া শুরু করতে পারো। ১০ মিনিট টিভি না দেখে, অথবা ফোনে না কাটিয়ে, পারলে বারান্দায় গিয়ে সামনের গাছের একটি ছবি এঁকে আসো, নাহয় একটু ফুটবল খেলে আসো, কিংবা কিছুক্ষণ রেওয়াজ করে আসো। শখগুলোকে পুনরায় জাগিয়ে তুলে, এই সহশিক্ষাগুলোই হোক না তোমার বিনোদন ও মনোরঞ্জনের মাধ্যম!

সময় ও সাধন:


এ যেন এক চিরায়ত সত্য। যাবতীয় সকল কিছুর ভিড় থেকে সরে এসে একটু চিন্তা করলেই আমরা দেখব, পড়ালেখায় সময় দেয়ার পাশাপাশি আমরা কতো ভাবেই না সময়ের অপব্যবহার করি। অনেক সময় নিজের অজান্তেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটিয়ে, অসময়ে প্রয়োজনের অধিক ঘুমিয়ে, কিংবা, শুধু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই চলে যায় দিনের সিংহভাগ। তুমি নিজেই বলো তো, এই ছোট্ট জীবনকালে, একেকটি মুহূর্তের মূল্যকে এভাবে অবহেলিত করা কি ন্যায়সংগত? উত্তরটি আশা করি আমার দেয়ার অপেক্ষা রাখে না। এতকিছু বোঝার পর, শুধুমাত্র সময়ের সদ্ব্যবহার করে কি ঘুরিয়ে দিতে পারো না তোমার জীবনের ঘড়ির কাঁটা?

শিক্ষা বনাম সহশিক্ষাঃ সাফল্য অর্জনের পথে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

কানে তালা লাগার মত শব্দে মুখরিত হলরুম। সপ্তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফল ঘোষণার আসর। এর মাঝেও শোনা যায় মাইকে উপস্থাপক বলে চলছে- “এ বছরের রৌপ্য পদক অধিকারী বাংলাদেশের সেবন্তি জাহান। সেবন্তি, তোমাকে অনুরোধ করা হচ্ছে তুমি স্টেজে এসে তোমার পুরষ্কারটি গ্রহণ কর।” কিন্তু বাংলাদেশের ছোট্ট শহরের ছোট্ট মেয়ে সেবন্তির তখনো নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। আসলেই কি সকল বাধা পেরিয়ে, রাত দিনের প্রাণান্ত চেষ্টা শেষে, দূরের দেশে পাড়ি দিয়ে আজ কোন ছোটখাটো পুরষ্কার নয়, বরং রৌপ্য পদক অর্জন করার সৌভাগ্য পেতে যাচ্ছে সে?
সেবন্তি জাহান মিলি। ছোটবেলা থেকেই গনিতের প্রতি প্রবল ঝোঁক মেয়েটির। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে, গেল বছর কলেজে উঠল। স্কুলে লেখাপড়ার চাপ ও সিলেবাস আয়ত্তে ছিল বলে সঠিক নিয়মে, মনোযোগ সহকারে দিনের কাজ দিনেই শেষ করে ফেলতে পারত। সেসব করে দিব্যি সময় দিতে পারত নিজের শখের (স্বভাবত নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করা ও তার ভাই এর উচ্চতর শ্রেণির বই থেকে পাওয়া অংক করা) কাজগুলোর জন্য। পড়াশোনার পাশাপাশি, এক্সট্রা কারিকুলার বা সহশিক্ষার তাগিদে নানান স্কুল, একাডেমী ও প্রতিষ্ঠানে অংশ নেওয়া ছিল তার নিত্য দিনের তালিকায়।
তবে উচ্চমাধ্যমিকে উঠতে না উঠতেই পড়ালেখার যে ভয়াবহ চাপ শুরু হল, তাতে বাইরের প্রতিষ্ঠানের সহশিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা তো দুরের কথা, পাঠ্যবইয়ের বাইরের দু’চারটা অংক করারও যেন সময় মেলেনা। আর দিনের সবটুকু সময় যদি ফিজিক্সের এস্কেপ ভেলোসিটির সূত্র না হয় বাংলা সাহিত্যের ‘বিলাসী’র নৈর্ব্যক্তিক সমাধান করতেই পার হয়ে যায়, তবে আত্মার শুদ্ধি তথা শখের কাজের সময় কই?
কিন্তু তার মন তো আবদ্ধ থাকে না পাঠ্যবইয়ের এক মুঠো গৎবাঁধা নিয়মের অংকের মধ্যে। কিন্তু আবার কলেজের কাজ আর মনের কাজ- এ দু’য়ের মধ্যে সে ভারসাম্য রাখবেই বা কি করে?
আরেকটি গল্প শুনি। কাজলের গল্প। কাজল- যে কিনা গান করতে ভালবাসে, ভালবাসে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ধ্যানে মগ্ন হতে, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও ওস্তাদ রশীদ খাঁর সুরে বিভোর হতে।
ছোটবেলা থেকে নিয়মিত রেওয়াজ করে আসা কাজল, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে পা রেখে হঠাৎ আবিষ্কার করে যে, এই শখের কাজটি ও এর পাশাপাশি যত ধরণের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে সে মনোনিবেশ করত- সেসব কিছুর জন্যই সে সময় বার করতে পারছে না। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিফারেন্সিয়েশান সমীকরণগুলি আত্মস্থ করার ফাঁকে খাম্বাজ রাগে গলা মেলানোটা যেন তার ঠিক হয়ে ওঠে না। জোর করে মেলাতে চাইলেও, প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের বিভীষিকাময় চাপে গান করার মত মানসিক ও শারীরিক অবসর তার কোথায়? কোথায় ফিরে পাবে সে সেই অফুরন্ত বিকেল, যখন ছিল না ব্যস্ত রুটিনে পরের দিনের কুইজের টেনশান, ছিল না CV ভারি করার জন্য “অর্থপূর্ণ ও লাভজনক শখ” খোঁজার তাগিদ।
তোমরা লক্ষ্য করে দেখবে, ওপরের দুটি গল্পই কিন্তু অসম্পূর্ণ। দুটোতেই রয়েছে অপূর্ণ স্বপ্নের হাতছানি। যে স্বপ্নে শখের রূপে সহশিক্ষার মতো একটি বিষয় বিসর্জিত হয়। যে স্বপ্ন সময়ের অভাবে, কর্মব্যস্ততার কারণে, “Real Jobs, Real Education” এর আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়।
যে স্বপ্ন আমাদের বৈশ্বিক চিন্তাধারায়, সেটি স্মৃতির এতই গভীরে চলে যায় যে, আমরা ভুলে যাই সেই চিরচেনা পংক্তি “বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর”। যেখানে পুরো পৃথিবীটাই জ্ঞানের রাজ্য-ভাণ্ডার, সেখানে প্রতিটি সহশিক্ষা থেকেই শেখার সুযোগ অসীম। প্রচলিত অর্থে সহশিক্ষা কোন প্রকার “লাভজনক” শিক্ষা না হলেও, জীবনের দৌড়ে সহশিক্ষার গুরুত্ব তুলনাহীন- তা হোক নতুন ভাষা শেখার মত জ্ঞানগর্ভ, বিতর্ক করার মত যুক্তি-যুদ্ধের, কি ছবি আঁকার মত নিতান্তই শৈল্পিক একটি শখ।
আজকের সহশিক্ষাই তো আগামীর শিক্ষা
পড়ালেখার পাশাপাশি এরূপ সহশিক্ষায় সময় দিতে গিয়ে অনেকেই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেনা। আগ্রহ ও মেধা থাকা সত্ত্বেও, পড়ালেখাকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে গিয়ে সহশিক্ষাকে বিদায় জানায় তারা। আসলে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তো এই মনোভাব পরিহার করারও সুযোগ নেই। তাহলে উপায়? দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া, ঘুম, আর মুঠোফোনের (বলা বাহুল্য!) জন্য সময় বরাদ্দ রেখে, কিভাবে বের করবে বাকি দুটির জন্য পর্যাপ্ত সময়?

সময় ও সাধন:

এ যেন এক চিরায়ত সত্য। যাবতীয় সকল কিছুর ভিড় থেকে সরে এসে একটু চিন্তা করলেই আমরা দেখব, পড়ালেখায় সময় দেয়ার পাশাপাশি আমরা কতো ভাবেই না সময়ের অপব্যবহার করি। অনেক সময় নিজের অজান্তেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটিয়ে, অসময়ে প্রয়োজনের অধিক ঘুমিয়ে, কিংবা, শুধু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই চলে যায় দিনের সিংহভাগ। তুমি নিজেই বলো তো, এই ছোট্ট জীবনকালে, একেকটি মুহূর্তের মূল্যকে এভাবে অবহেলিত করা কি ন্যায়সংগত? উত্তরটি আশা করি আমার দেয়ার অপেক্ষা রাখে না। এতকিছু বোঝার পর, শুধুমাত্র সময়ের সদ্ব্যবহার করে কি ঘুরিয়ে দিতে পারো না তোমার জীবনের ঘড়ির কাঁটা?

অভ্যাসের দাস আমরা সকলেই:

কোন অভ্যাসই একদিনে অভ্যাস হয়ে ওঠে না, তা হোক ভালো কি মন্দ। জীবনের প্রতিটা কাজই কোন না কোন অভ্যাসবশত করে আসছি আমরা। বাংলায় কথা বলছো? তা অভ্যাস হয়ে গেছে তাই। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাচ্ছো? তাও অভ্যাসের দাস হয়েই। এখানেই বিদ্যমান সূক্ষ্ম একটি সাফল্যের চাবিকাঠি। সকল বিষয় সম্বন্ধে সতর্ক হয়ে, তুমি কি আজ থেকেই অল্প অল্প করে চেষ্টা করে দেখতে পারো না, দিনের রুটিনে শখের কাজটির জন্য সময় বের করা যায় কি না? প্রতিদিন এটির পুনরাবৃত্তি করে কি এটিকে একটি নিত্যদিনের অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে পারো না? চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবে। শখের কাজটি শুধু শখ হিসেবে গণ্য না করে, এমন একটি পন্থা হিসেবে নাও, যা হতে ভবিষ্যতেও অনেক ধরণের উপকার পাওয়া যাবে।

ছকে বাঁধা জীবন:

শুনতে তেতো লাগলেও, তুমি যদি নিজের জীবনটি একটি ধরাবাঁধা ছক বা রুটিনের মধ্যে ফেলতে পারো, তাতে করে সারাদিনের কাজগুলো যে কি পরিমাণ শৃঙ্খলাপরায়ণ ও পরিকল্পনামাফিক করা সম্ভব হয়, তা একদিন চেষ্টা করলেই বুঝতে পারবে। শুরুতেই প্রতি ঘণ্টায় সম্ভব না হলেও, এক বেলা টার্গেট রেখে আগানো বেশ সহজতর হবে।
আমেরিকার কালজয়ী বিজ্ঞানী, লেখক ও রাজনীতিবিদ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কিন্তু একদিনে তার নিষ্ঠা ও শ্রমের পরিচয় দেননি। তার দৈনন্দিন জীবন এতটাই সময়ে বাঁধা ও রুটিনমাফিক ছিল যে, দিনের ২৪ ঘণ্টার সম্পূর্ণ ও প্রকৃষ্ট ব্যবহার করতেন তিনি। আর তাই সকল দরকারি কাজ শেষ করার পরও, নিজের জন্য সময় বের করতে পারতেন- যে সময়টায় তিনি শুধু গান শুনে, অথবা গল্পগুজব করে সময় কাটাবেন। তাঁর জীবন থেকে তাই অন্য কিছু না পারলেও, এই একটি শিক্ষা আমাদের সকলেরই গ্রহণ করা কাম্য যে, তাঁর মত একজন সর্বদা-ব্যস্ত ব্যক্তি যদি নিয়মিত নিজের জন্য সময় বের করে শখের কাজটি করতে পারেন- তবে আমরা কেন পারব না?

বদলে ফেলো দৃষ্টিভঙ্গি:

এটা কমবেশি সকল শিক্ষার্থীরই সম্মুখীন হতে হয় যে একনাগাড়ে পড়তে পড়তে মাথায় আর পড়া ধরে না। এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আমরা সকলেই মোটামুটি চোখ বন্ধ করে একটি সাধারণ উপায় অবলম্বন করি- হাতের কাছের ফোনটি নিয়ে ফেসবুক অথবা ইন্সটাগ্রাম অথবা অযাচিত যত ধরণের অ্যাপ এর ভেতর রয়েছে, প্রত্যেকটাতে একবার ঢুঁ মেরে আসি। তা কেউ ১০ মিনিটের জন্য, আবার কেউ ৩০ মিনিট।
এই কাজটা যে আমরা সবসময় নেহায়েত চেক করার ইচ্ছে থেকে করি, তা কিন্তু না। অনেকেই হয়ত ‘Brain Freeze’ কাটাতে অথবা একটা স্বল্প বিরতি নেবার জন্য করে থাকো। এই পাঠ্যবিরতিটিই কিন্তু তুমি একটি ভিন্ন আঙ্গিকে নেওয়া শুরু করতে পারো। ১০ মিনিট টিভি না দেখে, অথবা ফোনে না কাটিয়ে, পারলে বারান্দায় গিয়ে সামনের গাছের একটি ছবি এঁকে আসো, নাহয় একটু ফুটবল খেলে আসো, কিংবা কিছুক্ষণ রেওয়াজ করে আসো। শখগুলোকে পুনরায় জাগিয়ে তুলে, এই সহশিক্ষাগুলোই হোক না তোমার বিনোদন ও মনোরঞ্জনের মাধ্যম!

ডানা মেলো তোমার স্বপ্নের:

এলেন জনসন সারলিফ বলেছিলেন- “If Your Dreams Don’t Scare You, They Are Not Big Enough.” কথাটি আজও প্রতিফলিত আমাদের সকল আশা, আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়া-পাওয়া ঘিরে। স্বপ্ন যদি আকাশচুম্বীই না হল, তবে তা স্বপ্ন কিসের? স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির ৫টা কি ৮টা কোর্সের সীমানা পেরিয়ে স্বপ্ন দেখ আরও কিছু করার, বড় কিছু করার, ও বিশেষ করে পড়ালেখার বাইরে নিজের জন্য কিছু করার। ছাত্রজীবনের অদম্য শক্তি, মেধা, multitasking করার ক্ষমতা- সবকিছুই আছে তোমার। কেন পারবেনা তুমি হতে এ যুগের লতা মুঙ্গেশকর বা “The Next Shakib Al Hasan”?
সহশিক্ষা বা co-curricular activities বিষয়টা এমন একটা মাধ্যম যা থেকে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা বা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁকা, খেলাধুলা, বিতর্ক বা যাই তুমি করো না কেন, তাতে পারিবারিক পরিবেশের সায় ও সহযোগিতা থাকার পাশাপাশি, তোমার সর্বোচ্চ চেষ্টা, আগ্রহ ও উদ্দীপনা থাকা বাঞ্ছনীয়।
তোমার জীবনের গল্পটি যেন কোন সেবন্তি বা কাজলের গল্পের মত অপূর্ণ না থেকে যায়, সে লক্ষ্যে তোমার নিজেকেই শিক্ষা ও সহশিক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে শিখতে হবে। কেননা আজকের সহশিক্ষাই তো আগামীর শিক্ষা। এ দু’য়ের যেকোনো একটাতে ছাড় দেয়া মানে মেধার অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। আর এই তুমুল প্রতিযোগিতামূলক সমাজে পড়াশোনার পাশাপাশি সবকিছুর চর্চা চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য। যেখানে সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার খোলা- সেখানে তুমি প্রস্তুত তো?
স্কাই ফিল স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়:  skyfillschool@gmail.com

Friday, April 7, 2017

সফল মানুষেরা যেই ১০টি অভ্যাস মেনে চলেন প্রতিদিন

‘সাফল্য’ কোন মরীচিকা নয়। সারাজীবন অধরা থেকে যাবে এমন কোন অসাধ্য বস্তুও নয়। তারপরও কেন আমাদের চারপাশে এত এত মানুষ সারাজীবন হা-হুতাশ করে যায় সাফল্যের দেখা না পেয়ে? কেন কবিতার সেই “দেখিস, একদিন আমরাও!” কথাটা অনেকের জীবনে কোনদিন সত্যি হয় না?
উত্তরটা খুব সহজ! বিন্দু বিন্দু জলকণা থেকে যেমন বিশাল এক সমুদ্রের গর্জন উঠে, প্রতিদিন একটু একটু সাধনা আর সংকল্পের ছোঁয়ায় একজন সাধারণ মানুষও মহীরুহে পরিণত হয়ে উঠেন।
সুতরাং বুঝতেই পারছো, প্রতিভা বা মেধার দোহাই দিয়ে আসলে কিছু হয় না। ইতিহাসের স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিরা আমার তোমার মতই একেকজন পৃথিবীর আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষ, ভিনগ্রহের আগন্তুক নন। প্রচেষ্টা আর সাধনায় তাঁরা ছাড়িয়ে গেছেন অন্যদের প্রতিদিন একটু একটু করে। একটুখানি উদ্যোগ নিলে তুমিও পারবে একদিন তাঁদের কাতারে নাম লেখাতে।
বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে দেখেছেন সফল মানুষদের নিয়ে। মানুষগুলোর পেশা ভিন্ন, ভাষা, সংস্কৃতি, ভালবাসার জায়গাগুলোও ভিন্ন। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে তাঁদের দারুণ মিল- প্রতিদিন তাঁরা দশটি অভ্যাস অনুসরণ করেন। চলো, দেখে নেওয়া যাক তাঁদের সাফল্যের রহস্য কী!

১। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা

শুনতে খুব নিরানন্দ মনে হতে পারে! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, অ্যাপল, স্টারবাক, ইয়াহু, ডিজনি সহ বেশিরভাগ কোম্পানির CEO রাই খুব সকাল সকাল কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভোরবেলায় মস্তিষ্ক থাকে ক্ষুরধার, মন থাকে সতেজ। সূর্য উঠার আগেই কাজে নেমে পড়লে ঘুমন্ত পৃথিবীর থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা যায় প্রতিযোগিতায়, সফল মানুষরা এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেন? তাই তাঁরা ভোরবেলাতেই ঘুমকে ছুটি জানিয়ে নেমে পড়েন কর্মপরিকল্পনায়।

২। ছক ধরে কাজ করা

কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরি”- এ সমস্যা কমবেশি আমাদের সকলেরই। বুদ্ধিমানরা তাই শুরুতেই কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী প্ল্যান করে ফেলেন কোনটা আগে করতে হবে, তারপর সে অনুসারে এগোতে থাকেন। যে কাজগুলো অত জরুরী নয়, পরে করলেও চলবে সেগুলো রেখে প্রয়োজনীয় কাজগুলো ঝটপট সেরে নিলে অনেকটা সময় সাশ্রয় হয় প্রতিদিন

৩। শরীরচর্চা

শরীর একটা যন্ত্রের মতো। নিয়মিত ব্যবহারের অভাবে যন্ত্র যেমন বিকল হয়ে পড়ে, পরিমিত ব্যায়ামের অভাবে শরীরও তেমনি হয়ে পড়ে স্থবির। অবসাদ দূর করতে, প্রাণচাঞ্চল্য ধরে রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এজন্যই সফল মানুষরা প্রতিদিন ব্যায়াম করেন সময় ধরে। প্রখ্যাত লেখক হারুকি মুরাকামি প্রতিদিন ১০ কি.মি. দৌড়ান, সাঁতার কাটেন। অন্যান্য সফল ব্যক্তিরাও শরীরচর্চার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করে থাকেন। স্বাস্থ্যই যে সকল সুখের মূল!

৪। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি

সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হয় ধাপে ধাপে, একটু একটু করে। সেজন্য ছোট কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। কেবল “আমি ক্লাসে ফার্স্ট হবো!” এমন ভাবলেই তো কাজ হলো না! ফার্স্ট হতে হলে কী কী করতে হবে সেটা ঠিক করো। ক্লাস লেকচারের নোটগুলো ভালভাবে তুলো। প্রতিদিনের পড়াটা প্রতিদিন শেষ করো। এভাবে সুনির্দিষ্ট ছোট্ট ছোট্ট লক্ষ্য পূরণ করতে করতেই একটি বড় সাফল্যের দেখা পেয়ে যাবে তুমি!

৫। বইপড়া

তুমি কি জানো সফল মানুষরা যে কত্তো কত্তো বই পড়েন প্রতিদিন? ভাবতে পারো, তাঁদের তো ক্লাসে পড়া দেওয়ার ঝামেলা নেই, তাহলে কিসের জন্য বই পড়েন তাঁরা? জ্ঞানের খোরাক মেটানোর জন্যই দিনের একটি বড় সময় বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে কাটান তাঁরা। আব্রাহাম লিঙ্কন, বিল গেটস, এমা ওয়াটসন সহ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব আছেন প্রতিদিন বই না পড়লে ঘুম হয় না যাঁদের! একটি বইয়ের পাতায় পাতায় কত বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা, কত সহস্র মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ মেলে জগৎটাকে!
প্রতিদিন যদি একটা চ্যালেঞ্জই না থাকে তাহলে কিসের জীবন?
তাই কল্পনার রসদ সমৃদ্ধ করার জন্য পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক অনেক বই পড়েন সফল মানুষেরা। তরবারিকে শাণিত করার জন্য যেমন প্রয়োজন শাণপাথরের, মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার রাখতেও তেমনি প্রতিদিন বই পড়ার বিকল্প নেই।

৬। সব কূল সামলে চলা

সেই যে একটা মজার কথা প্রচলিত আছে- সোশাল লাইফ, ঘুম আর পড়াশোনা- এগুলোর যেকোন দুইটা সামলাতে গেলে অপরটা বজায় রাখা অসম্ভব! সফল মানুষরা এইরকম অনেক নৌকায় পা দিয়েও খুব সুচারুভাবে সবদিক সামলে চলেন! কিভাবে সম্ভব? ঐ যে, কর্মপরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন! প্রতিদিন আমরা যেই বিপুল পরিমাণ সময় অযথা নষ্ট করি সেটাকে কমিয়ে আনলেই দেখবে ২৪ ঘন্টা আসলে কত্তো বড়! একূল ওকূল সামলে চলতে গিয়ে ডুবতে হবে না তোমাকে আর!

৭। প্রস্তুতি

পাবলো পিকাসোর কাছে একবার এক মহিলা আবদার করলেন একটি পোর্ট্রেট এঁকে দিতে। তিনি তড়িৎগতিতে ত্রিশ সেকেন্ডে পোর্ট্রেট এঁকে নির্বিকার মুখে বললেন, “এর দাম দশ হাজার ডলার!”
“বলছেন কী আপনি! এত দাম! অথচ আপনার আঁকতে তো লেগেছে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড!”
“কিন্তু এই ত্রিশ সেকেন্ডে আঁকা রপ্ত করতে যে আমার সময় লেগেছে ত্রিশ বছর! তার দাম দশ হাজার ডলার!”
তুমি হয়তো ভাবছো ক্লাসের সেরা ছাত্রটি কতই না মেধাবী, কতই না ভাগ্যবান! কিন্তু এই অবস্থানে পৌঁছাতে তাকে যে কত নির্ঘুম রাত পাড়ি দিতে হয়েছে তার খবর ক’জন রাখি? ভাগ্য বলে কিছু নেই, প্রস্তুতি ছাড়া সাফল্য মেলে না।

৮। সবে মিলে করি কাজ

একা একা তুমি বেশ দ্রুত আগাতে পারবে, কিন্তু বেশিদূর আগাতে পারবে না। আর সবাইকে নিয়ে আগালে হয়তো যাত্রাপথে হোঁচট খেতে হবে একটু বেশি, কিন্তু একজন আরেকজনকে সাহায্য করবে বিপদের মোকাবিলায়, বন্ধন হবে অনেক দৃঢ়, এগোতে পারবে বহুদূর। তাই সফল মানুষরা সবসময় সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান। জ্ঞান যেমন ছড়ালে বাড়ে, কল্যাণের কলেবরও তেমনি প্রতি পদক্ষেপে বেড়েই চলে। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে তৃপ্তি তার কি কোন তুলনা চলে?

৯। নাছোড়বান্দার মত লেগে থাকা

জে. কে. রাওলিং হ্যারি পটারের প্রথম বইটি নিয়ে তেরোজন প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন, কেউই বইটি ছাপাতে রাজি হয়নি! মুখের উপর বলে দিয়েছিল, “এইসব ছাইপাঁশ কেউ পয়সা খরচ করে পড়বে না কোনদিন!” জ্যাক মা হার্ভার্ডে দশবার আবেদন করেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। এমন আরো অজস্র গল্প নিশ্চয়ই জেনে থাকবে তোমরা। সবখানেই একটা ব্যাপার লক্ষণীয়- তাঁরা যা করবেন পণ করেছিলেন সেটা শেষ পর্যন্ত করে ছেড়েছেন! এখানেই কিন্তু সাধারণ মানুষের সাথে তাঁদের তফাৎ! কারণ সাফল্যের দুইটা না তিনটা না, একটাই উপায়। সেটা হচ্ছে লেগে থাকা, কামড়ে ধরে থাকা, ঝুলে থাকা।

১০। কাজে নেমে পড়া

তোমার মাথায় অনেক অনেক বুদ্ধি গিজগিজ করছে, কিন্তু যতক্ষণ না সেটা খাটিয়ে তুমি বাস্তবে কিছু করছো, মানুষ কিন্তু জানবে না তোমার সুপ্ত প্রতিভার কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপচয় এই প্রতিভার অপচয়। প্রতিদিন যদি একটা চ্যালেঞ্জই না থাকে তাহলে কিসের জীবন? নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো প্রতিনিয়ত। কিছু করার সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে “এখন”। তাই “কিভাবে হবে” না ভেবে এখনই নেমে পড়ো কাজে, বিশ্বাস করো ঠকতে হবে না তোমায়! সফল মানুষরা এভাবেই যে নাম লিখিয়েছেন সফলদের কাতারে।
ভাল কথা, ভাল উপদেশ কখনোই পুরনো হবার নয়। তাই সফল মানুষদের এ অভ্যাসগুলো ধারণ করো নিজের ভেতর, ছড়িয়ে দাও বন্ধুদের মাঝে। সবাইকে একসাথে নিয়েই যে এগিয়ে যাওয়া চাই!
স্কাই ফিল স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়:  skyfillschool@gmail.com